নেংটো রাজার বাংলাদেশ

ফটো : ইন্টারনেট (প্রথমআলো)

রাজা নেংটো হয়েই হাঁটছিল রাজপথে,
সবাই কিন্তু দেখতেও পাচ্ছিলো তার নগ্ন পদচারণা !
তবুও সবাই চিৎকার, উচ্ছাস উল্লাসে বাগবাগ,
তোষামুদেরা সব সুর করে বলছিলো,
আহাহা কি সুক্ষ, কি অপূর্ব সুন্দর, রাজকীয়
আমাদের রাজা মশাইয়ের পরিধেয় বস্ত্র !
সেই জন সমাগমে কেউ ছিল মোসাহেব,
উচ্ছন্ন ভোগী, কেউ সুবিধাবাদী কেউবা
ক্ষমতা বলয়ের থাকা ছোট উপগ্রহ বিশেষ।
কেউবা সত্যি সত্যি জিম্মি রাজরোষের,
কেউ কেউ হতে পারে ভীত বা আত্মবিশ্বাসহীন।
কিন্তু এই ক্লীব প্রজাবৃন্দের ভিড়ে
নিজের আত্মা বিক্রি না করা একটি শিশুও ছিল,
সহজ সরল সত্যবাদী একটি দেবশিশু।

রূপকথার সেই গল্পটা কিন্তু সবারই জানা।
রূপকথার সেই রাজ্য যেন আজকের বাংলাদেশ,
ছদ্মবেশী স্বৈরাচার শাসনে গণতন্ত্র উলঙ্গ আজ !
বসনহীন গণতন্ত্রের গা থেকে একে একে খুলে গেছে
বাক ব্যক্তি স্বাধীনতার কারুকার্যময় পোশাকগুলো সব।
সবাই দেখছে যে দেশে গণতন্ত্র মৃতপ্রায়
সরকারের কথায় কাজে অবৈধ স্বরাচারের নিনাদ।
ইসি, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ সবাই ব্যস্ত তাঁবেদারিতে।
উলঙ্গ গণতন্ত্রে ধ্বংস বাক্ ব্যক্তি স্বাধীনতা,
সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা আর সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান।
তবুও রূপকথার স্তাবকবৃন্দের মতই আজ
জ্ঞানী গুণী সুশীল সমাজের কেউ কেউ ভাব করছে
যেন গণতন্ত্র, সুশাসনের উন্নয়ন সুনামিতে
জনগণের জীবনে চলছে সুখের বানভাসি!

কিন্তু এতো জ্ঞানী গুণী সুশীল আর উচ্ছিষ্টভোগীর ভিড়ে
সেই দেবশিশুটি কোথায় ?
উলঙ্গ গণতন্ত্রের গায়ে সুশাসনের ছদ্ম লেবাস পরাবার কারিগর
শাসক গোষ্ঠীর সামনে মোসাহেবীর লেজুড় ছিড়ে,
দেশের জনারণ্যে থেকে সেই শিশুটি নির্ভয়ে বেরিয়ে আসুক।
সহজ কণ্ঠে শাসক গোষ্ঠীকে জিজ্ঞেস করুক,
বাক, ব্যাক্তি স্বাধীনতাহীন দেশের উলঙ্গ গণতন্ত্রের গায়ে
বহুমতের কারুকার্যময় রেশমি কাপড়টা কোথায় গেলো?

—শ্রদ্ধাভাজনেষু কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আপনি এখনো লিখলে আমি আপনার লেখা এই কবিতাটা পড়তাম (জানি এই কবিতাটা তখন আরো মুগ্ধ কাব্য হতো)!

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৯ টি মন্তব্য (লেখকের ৪টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৪-১২-২০১৮ | ১২:৩১ |

    উলঙ্গ রাজা
    – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

    সবাই দেখছে যে, রাজা উলঙ্গ, তবুও
    সবাই হাততালি দিচ্ছে।
    সবাই চেঁচিয়ে বলছে; শাবাশ, শাবাশ!
    কারও মনে সংস্কার, কারও ভয়;
    কেউ-বা নিজের বুদ্ধি অন্য মানুষের কাছে বন্ধক দিয়েছে;
    কেউ-বা পরান্নভোজী, কেউ
    কৃপাপ্রার্থী, উমেদার, প্রবঞ্চক;
    কেউ ভাবছে, রাজবস্ত্র সত্যিই অতীব সূক্ষ্ম , চোখে
    পড়ছে না যদিও, তবু আছে,
    অন্তত থাকাটা কিছু অসম্ভব নয়।

    গল্পটা সবাই জানে।
    কিন্তু সেই গল্পের ভিতরে
    শুধুই প্রশস্তিবাক্য-উচ্চারক কিছু
    আপাদমস্তক ভিতু, ফন্দিবাজ অথবা নির্বোধ
    স্তাবক ছিল না।
    একটি শিশুও ছিল।
    সত্যবাদী, সরল, সাহসী একটি শিশু।

    নেমেছে গল্পের রাজা বাস্তবের প্রকাশ্য রাস্তায়।
    আবার হাততালি উঠছে মুহুর্মুহু;
    জমে উঠছে
    স্তাবকবৃন্দের ভিড়।
    কিন্তু সেই শিশুটিকে আমি
    ভিড়ের ভিতরে আজ কোথাও দেখছি না।

    শিশুটি কোথায় গেল? কেউ কি কোথাও তাকে কোনো
    পাহাড়ের গোপন গুহায়
    লুকিয়ে রেখেছে?
    নাকি সে পাথর-ঘাস-মাটি নিয়ে খেলতে খেলতে
    ঘুমিয়ে পড়েছে
    কোনো দূর
    নির্জন নদীর ধারে, কিংবা কোনো প্রান্তরের গাছের ছায়ায়?
    যাও, তাকে যেমন করেই হোক
    খুঁজে আনো।
    সে এসে একবার এই উলঙ্গ রাজার সামনে
    নির্ভয়ে দাঁড়াক।
    সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
    জিজ্ঞাসা করুক:
    রাজা, তোর কাপড় কোথায়?
    _______________________

    ধন্যবাদ মি. খন্দকার ইসলাম। সমসাময়িক অভিধায় অসাধারণ সংযোজন।
    যে ছায়ায় কবিতাটি এসেছে, সেই লিখাটি শেয়ার করার সুযোগ হারাতে চাইলাম না। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • খন্দকার ইসলাম : ২৫-১২-২০১৮ | ১২:২০ |

      মুরুব্বী,

      খুব খুশি  হলাম কষ্ট করে কবিতাটা এখানে দিয়েছেন বলে । 
      তরুণ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো বাংলা সাহিত্যেরই অন্যতম সেরা, এই অসাধাৰণ কবিতাটার কথা জানে না বা আগে পড়েনি । আমার খুব খুব প্রিয় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আর তার এই কবিতাটা । শুধু খারাপ লাগাটা এই যে, আমার অকবিতার দু'এক লাইন পরে রাগ করে কোনো পাঠক লগ অফ করে চলে গেলে তার আর এই কবিতাটা এখনো পড়া হবে না। অনেক ধন্যবাদ নেবেন সদয় মন্তব্যে ।

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ২৫-১২-২০১৮ | ২১:২৫ |

        আপনাকে স্বাগতম প্রিয় কবি মি. খন্দকার ইসলাম।

        GD Star Rating
        loading...
  2. খেয়ালী মন : ২৪-১২-২০১৮ | ১৬:৫৮ |

    উলঙ্গ গণতন্ত্রের গায়ে সুশাসনের ছদ্ম লেবাস পরাবার কারিগর
    শাসক গোষ্ঠীর সামনে মোসাহেবীর লেজুড় ছিড়ে,
    সেই শিশুটি একবার এসে বুক চিতিয়ে দাঁড়াক।
    সহজ কণ্ঠে শাসক গোষ্ঠীকে জিজ্ঞেস করুক,
    বাক, ব্যাক্তি স্বাধীনতাহীন দেশের উলঙ্গ গণতন্ত্রের গায়ে
    বহুমতের কারুকার্যময় রেশমি কাপড়টা কোথায় গেলো?

    ভালোই বলেছেনhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_cool.gif

    আমার ধারনা এই দেশের সরকার নিজে র রেশমি কাপড়ে সেই নতুন প্রজন্মের শিশুটিকেই পরতে দিয়েছে, কারন আগামীর দিনে শিশুটিকে যেন কেউ নগ্ন না ভাবে, তিনি ভেবেছেন র্বতমানে তার নগ্নতা ঢেকে রাখার চেয়ে আগামী দিনের নগ্নতা প্রকাশ করাই আরো বেশী লজ্জাকর হবে তাই….https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

     

    GD Star Rating
    loading...
    • খন্দকার ইসলাম : ২৫-১২-২০১৮ | ১২:২৩ |

      প্রিয় খেয়ালী মন,

      হাহাহা । ভালোই বলেছেন ।
      সৎ ভাবে ভেবে থাকলে হয়তো কোনোই দোষ দেওয়া যাবে না এই ভাবনার জন্য । কিন্তু আশংকাটা হলো নগ্ন রাজার রোষ থেকে শিশুটা বেঁচে থাকবেতো ? কচু কাটা হয়ে গেলে কিন্তু রেশমি কাপড়টা পড়ার কেউ থাকবে না । অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যে । আমার ব্লগেও স্বাগতম ।

      GD Star Rating
      loading...
  3. রিয়া রিয়া : ২৪-১২-২০১৮ | ২০:৩৬ |

    প্রেক্ষিত সাময়িকে অসাধারণ প্রয়াস। অভিনন্দন কবি খন্দকার ইসলাম দা।

    GD Star Rating
    loading...
    • খন্দকার ইসলাম : ২৫-১২-২০১৮ | ১২:২৮ |

      রিয়াদি,
      আমার এই অকবিতায় এই দরাজ দিল মন্তব্যে খুবই লজ্জ্বা পেলাম । তবুও প্রিয় ব্লগারকে অনেক অনেক থ্যাংকস অকবিকে কবিতা লিখায় দুরন্ত উৎসাহ দেওয়া মন্তব্যের জন্য । 

      GD Star Rating
      loading...
  4. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২৪-১২-২০১৮ | ২১:১৯ |

    কবিতাটি পড়লে শ্রদ্ধাভাজনেষু কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নিশ্চয়ই মুগ্ধ হতেন।
    আমি বিশ্বাস করি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • খন্দকার ইসলাম : ২৫-১২-২০১৮ | ১২:৩৫ |

      সৌমিত্র দা,
      নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'উলঙ্গ রাজা' কবিতাটা আমার সেই কলেজ দিন থেকে খুব প্রিয় । এরশাদ সাহেবের রাজত্ব চলছে তখন দেশে।আমার বড় ভাইয়ের ছেলেটার পাঁচ বছর বয়স । আমি ওকে এই কবিতাটার প্রথম কয়েক লাইন শেখালাম । ওর ভাঙা গলায় বলা কবিতার লাইনগুলো শুনে সবাই আমরা খুব খুশি । সেদিনের সেই ছোট ছেলেটা আজ বড় হয়ে চাকুরীও করে । আমার কষ্টটা হলো, আজ এতদিন পরে দেশের কথা মনে করে অনেক দুঃখ নিয়ে নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর কবিতাটার মতো একটা কবিতা লিখতে হলো যা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। জানি কবিতাটা অকবিতাই হয়তো হয়েছে । কিন্তু সেই লজ্জ্বার চেয়ে, ভালো কবিতা না লিখতে পারার কষ্টের চেয়েও কবিতা লেখার কারণটা আরো অনেক অনেক বেশি যাতনার । অনেক ভালো থাকবেন । সদয় মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানানো রইলো ।

      GD Star Rating
      loading...